জেলার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের শোলধারা ভায়া কেল্লাই রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে । এতে আনন্দেই আছেন শোলধাড়া, কেল্লাই এলাকার মানুষসহ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী হাজারো পথচারী। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন এক চিত্র। রাস্তার পার্শ্ববর্তী ইছামতি নদী খনন করে বালু ও মাটি তুলে এনে তা ফেলা হচ্ছে রাস্তায়। এলাকার অনেকে জানালেন, নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে খনন করা মাটি দিয়ে চলছে সরকারের এ উন্নয়ন কাজ। ফলে এলজিইডির এ রাস্তাটির উন্নয়ন ঘটলেও ড্রেজারের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে মাটি উত্তোলনের ফলে ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী শত শত পরিবার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধভাবে মাটি খননের প্রতিবাদ করলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাদের হুমকি দেন। ফলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত রাস্তাটি বাস্তবে রূপ নিতে থাকলেও কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে উন্নয়ন কাজটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
মানিকগঞ্জ এলজিইডি অফিস সুত্রে জানা যায়, আইআরআইডিপি -২ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ -২০১৭ অর্থ বছরের কাজটি গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখে ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৫২ হাজার পাঁচশত টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার একশত মিটার রাস্তা ও ২ টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স এম এ কুদ্দুস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ কুদ্দুস । আগামী বছরের মার্চের ২৫ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা।
গত নভেম্বরের শেষের দিকে কাজটি শুরু হয়, চলে রাস্তা খোঁড়ার কাজ। সেই সঙ্গে এলাকাবাসীর মুখে ফোটে হাসি। তবে যখনই রাস্তা কেটে উঁচু করতে শুরু হয় বালু ফেলা তখনই বাধে বিপত্তি। এলাকাবাসী বুঝতে পারেন এই কাজের ফলে তাদের হারাতে হতে পারে ফসলী জমি, বসতি এবং নদীর পাড়ে থাকা অবশিষ্ট জমি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, রাস্তার সংস্কার কাজ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঘিওর উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি জাকির হোসেন ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন। তিনি একই স্থান থেকে ক্রমাগত বালু উত্তোলন করতে থাকায় নদী ভাঙনের আশংকা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে শিমুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, আমি এই সরকার আসার পর থেকেই ড্রেজারের ব্যবসা করে আসছি এখনো পর্যন্ত কেউ আমাকে বাধা দিতে আসেনি। তিনি বলেন, এই কাজের ঠিকাদার হচ্ছেন আরিচার কুদ্দুস ভাই। আমি এই কাজ দেখভাল করার দায়িত্বে আছি মাত্র। কুদ্দুস ভাই-ই আমাকে এই নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে বলেছে। সুতরাং আপনাদের কিছু জানার থাকলে আপনি কুদ্দুস ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস জানান আমি এই রাস্তায় বালু ফেলার জন্য জাকিরকে চুক্তি দিয়েছি। সে কোথা থেকে বালু আনবে সেটা তার ব্যাপার। তবে আমি তাকে নদী থেকে বালু কাটতে বলিনি। এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা খোন্দকার জানান বিষয়টি জানার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে ড্রেজার মালিককে না পাওয়ায় ড্রেজারের একজন শ্রমিককে উপজেলা কার্যালয়ে নিয়ে আসি। এ সময় আমি অবৈধ ড্রেজার চালানোর দায়ে ড্রেজার মালিক জাকির হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলে দুই কিস্তিতে ড্রেজার মালিক জাকির তা পরিশোধ করেছে। কিন্তু জরিমানার পরও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে বলে তাকে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।
মানিকগঞ্জ এলজিডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেক হাওলাদার বলেন, ঠিকাদার কোথা থেকে মাটি এনে রাস্তা বানাবে সেটি তার দেখার বিষয় না। ঠিকাদার অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে খনন করা মাটি দিয়ে রাস্তা করলে সেটি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের।